ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

সংবাদ সম্মেলনে চাচার অভিযোগ জমিতে প্রাসাদ বানিয়ে মাদকের কারবার করছেন চকরিয়া পৌর যুবলীগ সম্পাদক সোহেল

চকরিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা :::

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেল চাচার জমিতে ব্যক্তিগত অফিসের বাইরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি টাঙিয়ে ভেতরে দীর্ঘ দিন ধরে চালিয়ে আসছিলেন ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ মাদকের কারবার। এই অভিযোগ পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ওই অফিসে গিয়ে তল্লাশি চালায়। তবে পুলিশের উপস্থিতি দেখে সোহেল ও তার সহযোগীরা সটকে পড়েন। পুলিশ চলে যাওয়ার পর ফের ওই অফিসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বরাবরের মতোই মাদকের কারবার শুরু করেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে যুবলীগ নেতা সোহেলের আপন চাচা ব্যবসায়ী আহমদ রেজা ওই জায়গা ছেড়ে দিতে বললেও পুলিশের সামনে তাকে টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে চকরিয়া প্রেস কাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ও মৌখিকভাবে এসব অভিযোগ করেন আহমদ রেজা। এ সময় আবুল কাসেম ও জামাল হোছাইনসহ আরো কয়েকজন জমির মালিক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আহমদ রেজা লিখিত অভিযোগে আরো বলেন, পৌরশহরের চিরিঙ্গায় পৌর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেল চাচাসহ কয়েকজনের মালিকানাধীন কোটি টাকার এই জমি জোরপূর্বক দখলে রেখে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমানে ওই জায়গায় সশস্ত্রভাবে চিহ্নিত ও দাগি অপরাধী এবং মাদক কারবারিদের পাহারায় রাখায় যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।
ব্যবসায়ী আহমদ রেজা আরো বলেন, ‘চিরিঙ্গা মৌজার বিএস ৯২ খতিয়ানের ৫২৮ ও ৫২৯ দাগাদির আন্দরে ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ জমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হোয়াইট স্টোন ডেভেলপারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন তারা। ইতোমধ্যে নির্মাণকাজও শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু আমার ভাতিজা পৌর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক পৈতৃক ও ক্রয়সূত্রে মালিকানাধীন জায়গায় যুবলীগের সাইনবোর্ড এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি টাঙিয়ে সেই জায়গা দখলে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে আহমদ রেজা বলেন, ‘সোহেল আমার আপন ভাতিজা। কিন্তু সে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার জন্য ইয়াবা ব্যবসা, ফেনসিডিল ব্যবসা, চোরাই মোটর সাইকেল হজম করার জন্য আমাদের এই জায়গাটি যুবলীগের কথিত অফিস বানিয়েছে। এতে লোকেমুখে আমাদের মান-সম্মান বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
তিনি অভিযোগ করেন, সোহেল চকরিয়ার ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বড় কারবারি। সে গত কয়েক বছরে মাদকের কারবার করে রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। পৌরশহরের সবুজবাগ এলাকায় তার রাজপ্রাসাদ দেখলেই যে কারো চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠবে। কেননা যে পরিবারের কোনো কিছুই ছিল না, সেই পরিবারের সদস্য সোহেল কিভাবে রাতারাতি এত অর্থ-বিত্তের মালিক হলেন। তা ছাড়া তার বাবা নুরুল হক প্রকাশ হাছু মিয়াও চকরিয়ায় হেরোইন ব্যবসায়ীদের অন্যতম। বিষয়টি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এবং দুদক যদি তদন্ত করে তাহলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি হাসানগীর হোছাইন বলেন, ‘পৌরশহর চিরিঙ্গায় পৌরসভা যুবলীগের কোনো কার্যালয় নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পৌর যুবলীগের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। কথিত ওই অফিস নিয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরার্মশ আমার।’
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত আজিজুল ইসলাম সোহেল দাবি করেন, আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত নানা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছেন তার চাচা আহমদ রেজা। তা ছাড়া মাদকের কারবারসহ এসব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন সোহেল।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো: বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে শুনে আসছি, দিনের বেলায় সোহেলের রহস্যঘেরা ওই কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত বাড়ার সাথে সাথে ওই অফিস জমজমাট হয়ে ওঠে। বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর থানায় অভিযোগকারী আহমদ রেজাকে প্রাণে হত্যার হুমকির বিষয়টিও পুলিশের নজরে রয়েছে।’

পাঠকের মতামত: